হঠাৎ দেখা 💛

by kobita | Published on November 27, 2024

- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রেলগাড়ির কামরায় হঠাৎ দেখা,
ভাবি নি সম্ভব হবে কোনোদিন।

আগে ওকে বারবার দেখেছি
লালরঙের শাড়িতে
দালিম ফুলের মতো রাঙা;
আজ পরেছে কালো রেশমের কাপড়,
আঁচল তুলেছে মাথায়
দোলনচাঁপার মতো চিকনগৌর মুখখানি ঘিরে।
মনে হল, কালো রঙে একটা গভীর দূরত্ব
ঘনিয়ে নিয়েছে নিজের চার দিকে,
যে দূরত্ব সর্ষেখেতের শেষ সীমানায়
শালবনের নীলাঞ্জনে।
থমকে গেল আমার সমস্ত মনটা;
চেনা লোককে দেখলেম অচেনার গাম্ভীর্যে।

হঠাৎ খবরের কাগজ ফেলে দিয়ে
আমাকে করলে নমস্কার।
সমাজবিধির পথ গেল খুলে,
আলাপ করলেম শুরু —
কেমন আছ, কেমন চলছে সংসার
ইত্যাদি।

সে রইল জানলার বাইরের দিকে চেয়ে
যেন কাছের দিনের ছোঁয়াচ-পার-হওয়া চাহনিতে।
দিলে অত্যন্ত ছোটো দুটো-একটা জবাব,
কোনোটা বা দিলেই না।
বুঝিয়ে দিলে হাতের অস্থিরতায় —
কেন এ-সব কথা,
এর চেয়ে অনেক ভালো চুপ করে থাকা।

আমি ছিলেম অন্য বেঞ্চিতে
ওর সাথিদের সঙ্গে।
এক সময়ে আঙুল নেড়ে জানালে কাছে আসতে।
মনে হল কম সাহস নয়;
বসলুম ওর এক-বেঞ্চিতে।
গাড়ির আওয়াজের আড়ালে
বললে মৃদুস্বরে,
“কিছু মনে কোরো না,
সময় কোথা সময় নষ্ট করবার।
আমাকে নামতে হবে পরের স্টেশনেই;
দূরে যাবে তুমি,
দেখা হবে না আর কোনোদিনই।
তাই যে প্রশ্নটার জবাব এতকাল থেমে আছে,
শুনব তোমার মুখে।
সত্য করে বলবে তো?

আমি বললেম, “বলব।”
বাইরের আকাশের দিকে তাকিয়েই শুধোল,
“আমাদের গেছে যে দিন
একেবারেই কি গেছে,
কিছুই কি নেই বাকি।”

একটুকু রইলেম চুপ করে;
তারপর বললেম,
“রাতের সব তারাই আছে
দিনের আলোর গভীরে।”

খটকা লাগল, কী জানি বানিয়ে বললেম না কি।
ও বললে, “থাক্‌, এখন যাও ও দিকে।”
সবাই নেমে গেল পরের স্টেশনে;
আমি চললেম একা।

Comments

alter_ego (November 27, 2024 23:12)

আমাদের গেছে যে দিন একেবারেই কি গেছে, কিছুই কি নেই বাকি। - পড়ে চোখের কোণে পানি এসে গেলো!

alter_ego (November 27, 2024 23:14)

এত অল্প কথায় এত বেশি বলে ফেলা, নাহ, উনি আসলেই দেবতুল্য 💚💚💚

kobita (November 27, 2024 23:20)

ঠিক 💛

anonymous (November 27, 2024 23:03)

রবিঠাকুরকে যতই পড়ি, ততই যেন নতুন রুপে আবিষ্কার করি। মানুষের মনের মধ্যে যা যা চলে, তা উনার চেয়ে সুন্দরভাবে আর সহজভাবে কেউ ফুটিয়ে তুলতে পেরেছে কি???

kobita (November 27, 2024 23:08)

হ্যাঁ, এই কবিতাটা আমারও রবিঠাকুরকে নতুন করে আবিষ্কার। প্রথমে পড়ে ভেবেছিলাম কোনো আধুনিক কবির লেখা। কিন্তু পড়তে পড়তে রবীঠাকুরকে ঠিকই চিনে ফেললাম। মানুষের না বলা কথাকে চমৎকারভাবে রুপ দেওয়ার ভয়ংকর ক্ষমতা আছে উনার। মানবমনে যে আশঙ্কা, দোলাচল চলে, তা যেন উনি ম্যাজিশিয়ানের মতোই বলে দিতে পারেন। আমরা উনার সাহিত্যকর্মের সুধা পাচ্ছি, আমরা চিরকৃতজ্ঞ 💛।

anonymous (November 27, 2024 23:10)

হুম, এসব পড়ার পর মনে হয়, এত সৌন্দর্য উপেক্ষা করে কিভাবে আমরা পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার কথা ভাবতে পারি! 😭😭😭

anonymous (November 27, 2024 23:00)

এত সুন্দর কেন কবিতাটা 😭😭😭