: ছোটবেলায় আমাদের কিছু স্বপ্ন থাকে, কিছু দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকে। যেমন, কেউ চায় নিজে খুব বড় কিছু বা দশজনের চেয়ে আলাদা কিছু একটা অর্জন করতে, অনেকে চায় সমাজে বড় পরিবর্তন আনতে। বড় হতে হতে দেখা যায়, মানুষ এসব আর করে উঠে না। আবার যারা সমাজ পরিবর্তনের মতো এমন কোনো পদমর্যাদায় উঠে, তারাও দেখা যায় নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত, ছোটবেলার সেই প্রতিজ্ঞাগুলো আর খেয়াল নেই, খেয়াল থাকলেও সেই গুরুত্ব আর নেই। এমনটা কেন হয়?
: সাধারণ মানুষের এটাই তো সহজাত প্রবৃত্তি। এরা ভীরু প্রকৃতির হয়, জীবনে শর্টকাট খুঁজে এবং কোনোভাবে দশজনের চোখে সম্মানের অবস্থানে থেকে, হতে পারে সে সম্মান মেকি, নিজেরা আরাম-আয়েশ করে মরতে পারলেই বাঁচে। স্বপ্নপূরণ করতে হলে শিশুসুলভ মনকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, সাহসী হতে হয়, দশজনকে অতিক্রম করে আলাদা উচ্চতায় নিজেকে নিয়ে যাওয়ার তীব্র ইচ্ছা ও সেই পরিশ্রম করার মতো স্পৃহা থাকতে হয়। সেটা কয়জনেরই বা থাকে!
: কিন্তু আমার তো মনে হয় ছোটকালে সবার মানসিকতাটা ঠিক এমনই থাকে। কেবল সে ভাবে আমি এখনো ছোট, যেদিন বড় হবো, বা বড় হতো হতে জীবনে যখন সু্যোগ আসবে, আমি এসব পূরণ করবো। বড় হতে হতে এমন কি হয় যে এ ধরনের মানসিকতা হারিয়ে যায়?
: যখন আমরা ছোট থাকি, আমাদের সামনে একটাই বাধা আছে বলে মনে হয়, সেটা হলো আমরা ছোট, আমাদের সুযোগ আর ক্ষমতা কম। তখন আমাদের চিন্তাগুলো খুব সরল প্রকৃতির হয়। জীবনে বেঁচে থাকা বা সমাজে টিকে থাকার জন্য যে জটিল প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তখন সেটা আমাদের জানা থাকে না, বা বুঝার সেই বয়স তখনও হয় না। তখনও আমাদের চিন্তাভাবনা সামাজিক বেড়াজালে বন্দী হয় না, আমরা নিজের জন্য বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখি, বাকি দশজনের চোখে ভালো থাকার চিন্তা আমাদের মনকে তখনও কলুষিত করে না। মূল কথা, ছোট বয়সে যা-ই চিন্তা করি, সবই সহজ সরল প্রকৃতির হয়। এসব অর্জন করতে যেসব বাধা আসলে আসবে, সেগুলো নিয়ে আমাদের কোনো ধারণাই থাকে না। যখন ধারণা আসতে শুরু করে, তখনও আমরা সেই স্বপ্ন ধরে রাখতে পারছি কিনা সেটা আমাদের মনোবল আর নৈতিকতার উপর নির্ভর করে। কিছু মানুষই ছোটবেলার আদর্শ ধরে রাখতে পারে, বাকিদের মরচে ধরে, অনেকের একেবারেই বিকৃত হয়ে যায়।
: বুঝলাম। এখন আমার যদি কোনো পরিবর্তন আনার সত্যিই ইচ্ছা থাকে, তাহলে কি করা উচিত? আমার কি চেষ্টা করা উচিত এমন একটা পজিশনে যাওয়ার জন্য, যেখান থেকে আসলেই পরিবর্তন আনা সম্ভব?
: হ্যাঁ এবং না। আমাদের অবশ্যই এমন অবস্থানে যাওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত, কিন্তু তার পাশাপশি এখনই নিজের জীবনে বা আশেপাশে ছোটোখাটো হলেও কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা উচিত। অনভ্যাসে বিদ্যা হ্রাস বলে একটা কথা আছে। সেটা এক্ষেত্রেও খাটে। হুট করে একদিন গিয়ে সবকিছু করবো, এটা আসলে অবাস্তব চিন্তা। কারণ চর্চা না থাকতে থাকতে একসময় এ চিন্তাতেই মরচে পরে যাবে, আর ওসব করতে ইচ্ছা হবে না তখন। এজন্যই শুধু পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে না, যার যেটা যেটা করার ইচ্ছা থাকে জীবনে, সেটা এখন থেকে হলেও ছোট পরিসরে করা শুরু করা উচিত, অন্তত যাতে প্রাত্যাহিক জীবনে এটার চর্চা থাকে এবং চর্চার মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখতে পারি। সেই সাথে এটার আরেকটা সুবিধাও আছে যে, ছোট পদক্ষেপ, বাধাও ছোট। বড় পরিসরে যদি একসাথে কিছু শুরু করতে যায়, একসাথে অনেক বাধা চোখে পরবে, যেসব অতিক্রমের মানসিক প্রস্তুতি আমাদের থাকবে না। ছোট থেকে শুরু করলে সেসব বাধা ছোট ছোট করে হলেও আমাদের চোখে পরবে, আমরা সেগুলো নিয়ে সজাগ থাকবো। তখন বড় পরিসরে আসলেও আমরা ঘাবড়ে যাবো না, হাল ছেড়ে দিবো না।
: তো এভাবে এখন থেকে চেষ্টা করলে তো আমাদের অনেক ভুল হতে পারে, অনেক ভুল ডিরেকশনে চেষ্টা চালিয়ে সময় অপচয়ও করতে পারি। তার চেয়ে কি এটাই ভালো নয় যে, পরিপূর্ণ জ্ঞানার্জন করে, নিজেকে সম্পূর্ণ গড়ে তোলে, তারপর এসবের দিকে নজর দেয়া?
: Remember, perfect moment doesn’t exist. And progress is better than perfection.
Comments
No comments yet.