স্বার্থপরতা, সাদাকালো ও পোষা প্রাণী

by anonymous | Published on November 4, 2024

আমরা স্বার্থ শব্দটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেগেটিভ ভাবেই ভেবে নিই।

যেমন ধর, আমি মাঝেমাঝে তোর সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলি বা তোর কোনো সমস্যা হলে সেগুলো দেখি। কেন কথা বলি? বা এসব যোগাযোগের প্রয়োজনই বা কি? সিম্পল উত্তর হলো, তোর সাথে কথা বলে আমার ভালো লাগে। এখানে উত্তরটা খেয়াল কর, "আমার", মানে স্বার্থ জড়িত। এখন আমি তো আমার স্বার্থ পূরণের জন্যই তোর সাথে কথা বলছি। তারমানে কি এটা দাঁড়ায়, তোর সাথে কথা বলতে আমার আরাম বা ভালো না লাগলে আমি কথা বলতাম না বা হেল্প করতাম না? হ্যাঁ করতাম, কিন্তু করার ভঙ্গিতেই তুই বুঝতি যে আমি অনিচ্ছাসত্ত্বে করছি। তারমানে তোর সাথে আমি যোগাযোগের বিষয়টা বেশিরভাগই নির্ভর করতেসে "আমার" তোকে কতটুকু ভালো লাগে তার উপর।

এভাবে যে কারও সাথে সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে আমি আমার ভালো লাগা ধর্তব্যে নিচ্ছি, তারমানে কি আমার উদ্দেশ্য খারাপ? বা এটা খারাপ কিছু? মোটেও না। অথবা খারাপ কিনা নির্ভর করতেসে আমার যোগাযোগ রাখার বিষয়টা তোর কেমন লাগতেসে তার উপর। তোর দিক থেকেও যদি চিন্তা করি, তোর ক্ষেত্রেও আমার সাথে যোগাযোগ রাখার কারণ মোটামুটি একই। তারমানে দুইজনের ক্ষেত্রেই কমবেশি যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রে নিজ নিজ ভালো লাগাটাই মানে স্বার্থটাই প্রাধান্য পাচ্ছে।

তো আমি যদি এই মেন্টালিটিতেই থাকি যে, আমি যার সাথেই সম্পর্ক করছি, সবখানেই গুরুত্ব দিচ্ছি নিজেকে। এভাবে স্বার্থপরের মতো "আমার ভালো লাগছে বলে সম্পর্ক রাখছি" এটা ভাবাটা একপেশে। যদি এটা নাই হতো, দেখা যেতো রাস্তাঘাটের যাকেই পরার্থপরতা দেখানো যায় সবার সাথেই আমার সম্পর্ক থাকতো, তাকে আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগুক আর না লাগুক।

আমরা যখন কারো প্রেমে পরি, প্রেমে পরার কারণটা (যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অস্পষ্ট বা অজানা থাকে) ঘুরেফিরে তাকে আমাদের কোনো না কোনোভাবে ভালো লেগে যায়, তাই থাকে। এভাবে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠার পর ওই মানুষটাও আমাদের যত্ন নেয়, আমাদের ভালোবাসে, ঠিক তখন গিয়ে আমরা তার সাথে যাচ্ছেতাই আচরণ করতে পারি বা অবহেলা করতে পারি, এর আগে না। কারণ এর আগে যদি তাকে অবহেলা করিও, তার সেটা বুঝারই কথা নয়।

এবার যদি বিড়াল-কুকুরের দিকে যাই, প্রাণীরা কিন্তু ওদের কেয়ার করলেই আমাদের দিকে আকৃষ্ট হয়, হুদাই হুদাই কোনো প্রাণী তোমাকে এসে ভালোবাসা দেখাবে, এমনটা হয়না। তুই বিড়াল-কুকুরকে মায়া-মমতা দেখানোর পরই ওরা তোমার অন্ধভক্ত হবে, এর আগে না। তবে ওরা তোমার অন্ধভক্ত হওয়ার পর তুমি যদি ওদের থেকে মায়া-মমতা কেড়ে নাও, তবে সেটা অবশ্যই খারাপ। বাট প্রথমটা তোমার থেকেই আসছে।

এখন আমি যদি বলি যে, ভাই, আমি একা হয়ে গেছি তাই আমার খারাপ লাগছে, এখানেও আমি নিজের চিন্তা করতেসি, আমি কত খারাপ - এডা কিসু হইলো?

তাহলে তো কারো সাথে সম্পর্ক করাটা যেমন স্বার্থপরতা, না করটাও স্বার্থপরতা।
এখন এটার মাপ কাঠি কি?

আমার মাপকাঠি হলো কোনো কিছুর শুরুতে নিজের স্বার্থ থাকাটাই স্বাভাবিক, কিন্তু পরবর্তীতে যাতে অন্যের দিকটাও আমি ভাবনায় রাখি। আমি যদি নিজের স্বার্থে কারো সাথে কিছু করি, তাহলে যাতে আমি তার স্বার্থেও তার জন্য কিছু করার মন-মানসিকতা রাখি। এটাই।

Comments

No comments yet.